সমাজে বসবাস করার কারণে অনেক সময় অনেকের আইনের সহায়তা নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। থানায় মামলা করার নিয়ম কোর্টে মামলা করার নিয়ম আদালতের আইনে কিভাবে দ্বারস্থ হতে হয় এই বিষয়ে অনেকেই জানে না আবার অনেকেই আছে এখন পর্যন্ত তারা থানাতেও যাতায়াত করে নি। তাই আজকে আমরা আপনাদেরকে জানাব থানায় মামলা করার নিয়ম এবং কোর্টে মামলা করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তাছাড়াও মামলা সম্পর্কে আমরা এখানে সম্পূর্ণ ধারণা দিব আশা করি সম্পন্নটা বিস্তারিত জানতে পারবেন।
বিভিন্ন কারণে অনেকেরই আইনি সহায়তা নেয়ার প্রয়োজন পড়ে সাধারণ ডায়েরি থেকে শুরু করে মামলা করা বা আইনি জটিলতা পড়ার আগে কিভাবে সহজে আপনি সহায়তা নিতে পারেন। এবং কোন সহায়তার জন্য আপনাকে কোথায় যেতে হবে সেই সম্পর্কে এইখানে ধারণা দেওয়া হবে। আবার এমনটাও হতে পারে সঠিক সময়ে মামলা না করার কারণে গুরুত্বপূর্ণ আলামত গুলো নষ্ট হয়ে যায়। সম্পন্ন নিয়মকানুন সম্পর্কে বিস্তারিত আজকে জানিয়ে দিব আপনাদেরকে।
সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করার নিয়ম
আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণ একটি ডায়েরি বা জিডি করতে হয়। কোন কিছু হারিয়ে গেলে অথবা কেউ হুমকি দিলে পুলিশকে প্রাথমিকভাবে তথ্য জানানোর জন্য সাধারণ ডায়েরি করা হয়ে থাকে বা জিডি করা হয়ে থাকে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্যও সাধারণ ডায়েরি করা হয়। জিডি স্থানীয় থানায় করতে হয়। যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে অথবা যে এলাকায় আপনার মালামাল হারিয়ে গেছে সেই এলাকার স্থানীয় থানায় জিডি করতে হবে। এছাড়া অন্য কোন থানায় জিডি করা যায় না।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর সাদা কাগজে, নিজ এলাকার থানা, বিষয়,” জিডি প্রসঙ্গে” বিস্তারিত লিখে আবেদন করতে হয়। জেজেডি করবে তার নাম, ফোন নাম্বার, এনআইডি কার্ড বিস্তারিত থাকতে হবে। কোন কিছু হারিয়ে গেলে সেটার বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করতে হবে। মালামাল এর ধরন, নাম্বার, আকার আকৃতি বিস্তারিত বর্ণনা থাকতে হবে।
এনআইডি কার্ড, সার্টিফিকেট, দলিল, যে কোন আইডি কার্ড, হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় থানায় একটি ফটোকপি নিয়ে জিডিতে নথিভুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনীয় নাম্বার, বিস্তারিত তথ্য ভালোমতো উপস্থাপন করে জিডিতে উল্লেখ করতে হবে। জিডি করার জন্য পার্সোনাল তথ্য সেখানে উল্লেখ করতে হবে। প্রতিটি জিডি তদন্ত করে প্রতিবেদন করা হয়ে থাকে। আলোচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না হলে এবং হারিয়ে যাওয়ার মত বিষয় সাধারণ কোন বিষয় হলে পরবর্তীতে এর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
থানায় মামলা করার নিয়ম
থানায় মামলা করার ক্ষেত্রে সাদা কাগজে অভিযোগকারীর বিস্তারিত বর্ণনা, অভিযুক্তদের নাম, অভিযুক্তদের ঠিকানা, বিস্তারিত ভাবে লিখে অভিযোগটি দিতে হবে। এটাকে বলা হয় এজাহার। আর থানায় যে রেকর্ড বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় এজাহার সংযুক্ত করে নথিভুক্ত করা হয়ে থাকে সেটাকে বলা হয় এফআইআর বা ফাস্ট ইনফর্মেশন রিপোট। ভর্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে তার নাম ঠিকানা বিস্তারিতভাবে আরো তথ্য যোগ করা হলে সেটাও এজাহার বা এফআইআর এর সাথে সংযুক্ত করা হয়ে থাকে।
যেকোনো ধরনের মামলা করার ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরতে হবে। এবং ঘটনার বিস্তারিত আলোচনা করা এবং প্রমাণ সংরক্ষন করা এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধর্ষণের মত ঘটনাকে অনেক সময়ই দেরি হওয়ার কারণে আলামত হারিয়ে যেতে পারে। আবার অনেক সময় হত্যা দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর সময় স্বজনরা সেখানে আলামত নাড়াচাড়া করে ফেলে যা মামলা তদন্তের জন্য অনেকটাই ক্ষতি হয়ে যায়।
অনেক সময় দেখা যায় থানাতে মামলা কম দেখানোর উদ্দেশ্যে থানার কর্মকর্তারা ছিনতাই ও চুরির ঘটনায় মামলা না করে সরাসরি তারা জিডি করার পরামর্শ দিয়ে থাকে। কিন্তু এসব কিছু না করে সরাসরি মামলা করা উচিত। যদি থানার কোন কর্মকর্তা মামলা নিতে না চায় তাহলে উচ্চ কর্মকর্তাদের জানাতে হবে।
আরো পড়ুন: বিদেশ যাওয়ার জন্য কোন ব্যাংক লোন দেয় দেখে নিন
যেকোনো ধরনের মামলা হওয়ার পরেই একজন কর্মকর্তাকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। অনেক সময় ওসি নিজেও এই কাজে তদন্ত কর্মকর্তা হতে পারেন। আমার এই মামলার গোয়েন্দা, পুলিশ, সিআইডি স্থানান্তরিত হলে সেখানে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়ে থাকে। তবে যে কোনো বাহিনী এ বিষয়টা তদন্ত করুক না কেন বা আটক হয় গেলেও স্থানীয় থানার মাধ্যমেই হবে যে কোন বাহিনী আটক করলে সেটার মামলায় স্থানীয় থানায় মামলা হয়।
কোর্টে মামলা করার নিয়ম
কোনো কারণবশত যদি থানায় মামলা না নেই তাহলে সরাসরি ভুক্তভোগী কোর্টে গিয়ে মামলা করতে পারবে। কোর্টে গ্রহণযোগ্য মনে করলে মামলাটি গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট থানা কে এফআইআর গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এবং আদালতে আবেদন খারিজ করেও দিতে পারে। রাষ্ট্রদ্রোহী কোন মামলার জন্য আদালত সরাসরি বিচার কার্যক্রম শুরু করতে পারে।
তবে এটা জানা রাখসিত জমিজমা, পারিবারিক বিষয়, সম্পত্তি বা মালামাল, অর্থ ইত্যাদি বিষয়গুলো আদালতে দেওয়ানী মামলা হিসেবে মামলা করা হয়। শুধুমাত্র পারিবারিক নির্যাতন নারী সহিংসতার ব্যতীত। কোর্টে মামলার যেকোনো ধরনের সহায়তার জন্য আইনজীবীদের সহায়তা নিতে পারবেন। তবে সাধারণত ফৌজদারি এবং দেওয়ানী মামলার জন্য আলাদা ধরনের আইনজীবী কাজ করে থাকে সুতরাং আইনজীবিদের সহায়তা নিতে হলে সেটা আগে জেনে নেওয়া দরকার এই বিষয়ে।
দেওয়ানী মামলা করার নিয়ম
দেওয়ানী মামলা করার জন্য প্রথমেই সংশ্লিষ্ট আদালতে যেতে হবে। মামলা বিষয়ে নিশ্চিতভাবে ওই আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত আছে কিনা জেনে নিতে হবে। 25000 টাকার অধিক মূল্যের দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে কজেস আদালত করে তাহলে ওই আদালতে আরেকটি আর ভক্ত করা হয় না। নির্ধারিত আদালতে যাওয়ার পর প্রথম ধাপ হলো মামলার লিখিত বিবরণ দাখিল করা যাকে আরজি বলা হয়। যে সকল কাগজ পাতি উপর মামলা ভিত্তি করে দাখিল করা হয় যেমন প্রসেস ফ্রি ডাক যোগা জারির জন্য প্রয়োজনীয় প্রাপ্তি স্বীকার পত্র দাখিল করতে হয়।
হাইকোর্টে মামলা করার নিয়ম
হাইকোর্টে বিভিন্ন ধরনের মামলা করা হয়ে থাকে। নিম্ন আদালতে মামলার বিচার প্রক্রিয়াগুলো শেষ হলে যে রায় পাওয়া যায় ওই রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুদ্ধপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারে। মৃত্যুদণ্ডাদেশ উচ্চ আদালতে অনুমোদনের জন্য করা হয়ে থাকে। নিম্ন আদালতে বিচারের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করা হয়।
অনেক সময়ই উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতকে একটি নির্দিষ্ট মামলার ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। আবার অনেক সময় সরাসরি মামলাটি উচ্চ আদালতেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিছু মামলা এমন রয়েছে যেগুলো সরাসরি হাইকোর্টে স্থানান্তরিত করা হয়। যেমন রিট, সংস্থার মামল্ বিবাহের বা খ্রিস্টান এর মামলা, জাহাজের মামলা এবং সমুদ্র বা এডমিরালটি মামলা।