বসনিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বলকান অঞ্চলের একটি ছোট ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত একটি দেশ। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই বসনিয়ার কাজের ভিসার মাধ্যমে ইউরোপে প্রবেশের সুযোগ খোঁজেন বা সেখানে কাজ করে থাকে। যদিও দেশটি আকারে ছোট, তবে বিভিন্ন শিল্প ও পরিসেবামূলক কাজে বিদেশি কর্মীদের চাহিদা দিন দিন বেড়েছে।
আজকে আমরা এই আর্টিকেলে বসনিয়া কাজের ভিসা পাওয়ার নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, খরচ, বেতন কাঠামো, বসবাসের খরচ, চাকরির সুবিধা এবং কোন কাজের চাহিদা বেশি এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বসনিয়া কাজের ভিসা পাওয়ার নিয়ম
- ধাপ ১: চাকরির অফার লেটার সংগ্রহ।
- ধাপ ২: প্রয়োজনে কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন।
- ধাপ ৩: ওয়ার্ক পারমিট আবেদন।
- ধাপ ৪: ভিসা আবেদন জমা দেওয়া।
- ধাপ ৫: ইন্টারভিউ এর জন্য প্রস্তুত হন।
- ধাপ ৬: ভিসা অনুমোদন এবং বসনিয়া গমন।
বসনিয়া কাজের ভিসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- বৈধ পাসপোর্ট
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- ভোটার আইডি কার্ড
- জব অফার লেটার
- চাকরির চুক্তিপত্র
- স্বাস্থ্য বিমা
- কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
- মেডিকেল রিপোর্ট
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
এই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যদি কোন ভুল ত্রুটি থাকে তাহলে কিন্তু বসনিয়া কাজের ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে তাই অবশ্যই আগে থেকেই এই কাগজপত্র গুলো প্রস্তুত রাখুন।
আরো পড়ুন: সরকারি ভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায় খরচ বিস্তারিত
বসনিয়া যেতে কত টাকা লাগে?
বাংলাদেশ থেকে সরাসরি বসনিয়ার ভিসা আবেদন করা যায় না। এজন্য ভারতে অবস্থিত বসনিয়া দূতাবাসে গিয়ে ভিসা প্রসেস করতে হয়। ভিসা প্রসেসিং, এজেন্ট ফি, টিকেট ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ৮-১০ লক্ষ টাকা লাগতে পারে।
এছাড়াও নেপাল, মালয়েশিয়া, ও অন্যান্য দেশের মাধ্যমে ও বসনিয়া কাজের ভিসা পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে ভিসার দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে কিন্তু ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ লাগতে পারে।
বসনিয়ায় কাজের বেতন কত?
বসনিয়ায় বেতন কাঠামো কাজের ধরন, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত নিম্ন স্তরের প্রতি মাসে কাজের বেতন ৫০,০০০ – ৮০,০০০ টাকা। আর প্রতি মাসে দক্ষ কর্মীদের বেতন ৮০,০০০ – ১,৫০,০০০ টাকা।
বসনিয়ার সরকার কর্মীদের জন্য নির্ধারিত সর্বনিম্ন বেতন প্রায় ৩২৯.৪ ডলার (৪০,০০০ টাকা)। কর্মীদের সাধারণত সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এছাড়াও ওভারটাইম বা কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
বসনিয়ায় কোন কাজের চাহিদা বেশি?
বসনিয়ার কিছু নির্দিষ্ট কাজের জন্য বিদেশি কর্মীদের চাহিদা রয়েছে, যেমন:
- নির্মাণ শ্রমিক
- ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার
- হোটেল ও রেস্টুরেন্ট কর্মী
- ড্রাইভার
- ইলেকট্রিশিয়ান ও প্লাম্বার
- ক্লিনার ও কেয়ারটেকার
- সিকিউরিটি গার্ড
- ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার
- কৃষি কর্মী
- কনস্ট্রাকশন কর্মী
বসনিয়া বসবাসের খরচ কত?
বসনিয়ায় বসবাসের খরচ তুলনামূলক কম হলেও এটি শহরভেদে পরিবর্তিত হয়। বসনিয়া বসবাসের জন্য কত টাকা খরচ লাগতে পারে তার একটি ধারণা নিচে তুলে ধরা হলো:
- বাসা ভাড়া: মাসিক ২০,০০০ – ৫০,০০০ টাকা (স্থান অনুযায়ী)
- খাবারের খরচ: মাসিক ১৫,০০০ – ৩০,০০০ টাকা।
- পরিবহন খরচ: মাসিক ৫,০০০ – ১০,০০০ টাকা।
কাজের ভিসা নিয়ে যাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু কয়েকজন একত্রে থাকলে বাসা ভাড়া খাবার খরচ এবং অন্যান্য খরচ কিছুটা কম হয়। তাই এক্ষেত্রে আপনারা যদি কয়েকজন মিলে একসঙ্গে থাকতে পারেন তাহলে কিন্তু কম খরচের মধ্যেই থাকতে পারবেন।
বসনিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় ২০২৫
বসনিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার প্রধান দুটি মাধ্যম হলো বিমান এবং স্থলপথ। যদি আপনি দ্রুত ইতালি পৌঁছাতে চান, তবে বিমান ভ্রমণ সবচেয়ে ভালো বিকল্প। সারাজেভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইতালির বিভিন্ন শহরে সরাসরি ফ্লাইট পাওয়া যায়। এসব ফ্লাইট দ্রুততম এবং আরামদায়ক, বিশেষ করে যারা সময় বাঁচাতে চান তাদের জন্য এটি আদর্শ।
এছাড়া, যারা স্থলপথে যাত্রা করতে চান, তাদের জন্য বাস বা ট্রেনের মাধ্যমে ইতালি পৌঁছানোর সুযোগ রয়েছে। এই পথটি তুলনামূলকভাবে সস্তা হলেও, এতে সময় বেশি লাগতে পারে। বিশেষত, যারা ইউরোপে বসবাস করছেন বা বসনিয়া থেকে ইতালিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তারা এই দুটি পদ্ধতির মধ্যে তাদের চাহিদা অনুযায়ী যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন।
এবং যারা অবৈধভাবে বসনিয়া নেওয়া থেকে ইতালিতে যেতে চাচ্ছেন তারা অবশ্যই সাবধান থাকবেন। কেননা বর্তমান সময়ে বসনিয়া থেকে ইতালিতে যাওয়া আগের তুলনায় অনেকটাই কঠিন এবং অনেক রিস্ক রয়েছে। তাই বৈধভাবেই বসনিয়ে থেকে ইতালিতে যাওয়া উচিত।
আরো পড়ুন: সরকারি ভাবে ইতালিতে যাওয়ার খরচ এবং সুযোগ
বসনিয়ায় কাজের সুবিধা
- ইউরোপের অন্যান্য দেশে কাজের অভিজ্ঞতা তৈরি করার সুযোগ।
- বসবাসের খরচ তুলনামূলক অনেক কম।
- স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পাওয়া যায়।
- ইউরোপের অন্যান্য দেশে যাওয়া সহজ।
- কম খরচে সেখান থেকে ইউরোপে যাওয়া যায়।
বসনিয়া কাজের ভিসা সীমাবদ্ধতা:
- সরাসরি বাংলাদেশ থেকে ভিসা প্রসেস করা যায় না।
- সীমিত সংখ্যক উচ্চ বেতনের চাকরি।
- নতুন অভিবাসীদের জন্য ভাষাগত সমস্যা হতে পারে।
- ভালো কাজ না জানলে কাজ পাওয়া কঠিন।
- বাংলাদেশ থেকে দালালের মাধ্যমে যাওয়া লাগে।
- বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশ তারপরে বসনিয়া এতে খরচ বেশি লাগে।
- সকল কাগজপত্র ম্যানেজ করা অনেক কঠিন।
উপসংহার
বসনিয়ায় কাজের সুযোগ থাকলেও ভিসা পাওয়ার জন্য ভালো কোন মাধ্যমে জব অফার পাওয়া এবং ওয়ার্ক পারমিট থাকা অত্যন্ত জরুরি। বসনিয়া কাজের ভিসার জন্য নির্ভরযোগ্য এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করাই ভালো। এক্ষেত্রে ভারতে বসনিয়া দূতাবাসের মাধ্যমে নিজে আবেদন করতে পারবেন।