ব্রয়লার মুরগির ৩০ দিনের ঔষধের তালিকা: কার্যকরী চিকিৎসা ২০২৫

ব্রয়লার মুরগি পালন একটি লাভজনক ব্যবসা, তবে এর জন্য সঠিক পরিচর্যা এবং চিকিৎসা প্রয়োজন। মুরগির স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে এবং দ্রুত বর্ধনশীলতা নিশ্চিত করতে, মুরগিকে সঠিক সময়ে সঠিক ঔষধ এবং ভ্যাকসিন দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকে আমরা ১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ব্যবহৃত ঔষধ এবং ভ্যাকসিনেশন পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে জানবো। এই গাইডটি আপনাকে মুরগির সঠিক পরিচর্যা এবং বড়ো আকারে লাভবান হওয়ার পথে সাহায্য করবে।

ব্রয়লার মুরগির ৩০ দিনের ঔষধের তালিকা ২০২৫

বয়লার মুরগির ৩০ দিনের ওষুধের তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলো:

এটি একটি পরিপূর্ণ ঔষধের তালিকা, যা ব্রয়লার মুরগির স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হবে। তাই আপনার প্রত্যেকটি বয়লার মুরগির ব্যাচে এই নিয়মে যদি ভ্যাকসিন এবং ওষুধগুলো সেবন করেন তাহলে অনেক লাভবান হতে পারবেন এবং মূর্খের মর্টালিটি কম থাকবে।

ব্রয়লার মুরগির ১ থেকে ৩৫ দিনের ঔষধের  ব্যবস্থাপনা

১/ ব্রয়লার মুরগিতে ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম

ভ্যাকসিন দেওয়ার সময়সূচি: ব্রয়লার মুরগি পালনে প্রথম ৩ দিনের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। প্রথমে মুরগির চোখে বা পানিতে ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে, মুরগি দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে রক্ষা পায়। সাধারণত হিউম্যানডি ভাইরাস, নিউমোনিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

কিভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করবেন:

• প্রথমে ভ্যাকসিনের সঠিক ডোজ নির্ধারণ করতে হবে। প্যাকেটের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে।
• মুরগির পানির পাত্রে ভ্যাকসিন মিশিয়ে দিলে, মুরগি তা পান করবে। এছাড়া, চোখে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে তা দ্রুত কার্যকর হয়।
• প্রথম ভ্যাকসিনের পর অন্তত ৭ দিন মুরগির প্রতি সঠিক ভিটামিন এবং পরবর্তী ভ্যাকসিন দিতে হবে।

কতটুকু ব্যবহার করতে হবে:

• ভ্যাকসিনের ডোজ অবশ্যই কোম্পানির নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, ১০০ লিটার পানিতে ১ ভায়াল ভ্যাকসিন দেওয়া যায়।

২/ ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে ও পরে করণীয়

ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে করণীয়: ভ্যাকসিন দেওয়ার ৬ ঘণ্টা আগে মুরগিকে ভিটামিন সি অথবা এডিথ্রি দিতে হবে। এটি তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উপকারী।

ভ্যাকসিন দেওয়ার পর করণীয়: ভ্যাকসিন দেওয়ার পর প্যারাসিটামল এবং ভিটামিন এ, ডি থ্রি ব্যবহার করতে হবে। এটি মুরগির শরীরের উপকারী প্রতিক্রিয়া বাড়ায় এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন:

• ভিটামিন সি এবং এডিথ্রি মুরগির পানিতে মিশিয়ে দেবেন।
• প্যারাসিটামল বা ভিটামিন সি ২-৩ দিন পর্যন্ত ব্যবহৃত হবে, যা তাদের শক্তি ও সুস্থতা বজায় রাখবে।

৩/ প্রথম তিন দিনের ঔষধ ব্যবস্থাপনা

কিভাবে ব্যবহার করবেন: প্রথম তিন দিন মুরগিকে সাদা পানি বা লাইসোফেট ব্যবহার করানো যেতে পারে। সাদা পানি তাদের হাইড্রেশন বজায় রাখে, যা পরবর্তীতে অন্যান্য ঔষধ গ্রহণে সাহায্য করে।

কতটুকু ব্যবহার করবেন:

• প্রথম ৩ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিদিন ১ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম লাইসোফেট বা সাদা পানি দিতে হবে।
• প্রতিদিন ৭২ ঘণ্টা এটি দিতে হবে

৪/ ৪ থেকে ৭ দিনের ঔষধ ব্যবস্থাপনা

কিভাবে ব্যবহার করবেন: ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যে নিউ মাইসিন বা এন্ডোফ্লক্সিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত। এটি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

কতটুকু ব্যবহার করবেন:

• মুরগির প্রতি ১০০ লিটার পানিতে ৫-১০ মিলি নিউ মাইসিন বা এন্ডোফ্লক্সিন মিশিয়ে দিন।

৫/ ৮ থেকে ১০ দিনের ঔষধ ব্যবস্থাপনা

কিভাবে ব্যবহার করবেন: এই সময়কালে লিভার টনিক, জিঙ্ক, এবং এডিথ্রি ব্যবহার করতে হবে। এটি মুরগির লিভার ফাংশন ঠিক রাখতে সাহায্য করবে এবং তাদের পুষ্টি জোগাবে।

কতটুকু ব্যবহার করবেন:

• প্রতিদিন ৫০ লিটার পানিতে ১ মিলি লিভার টনিক, ১০ মিলি জিঙ্ক এবং ২ মিলি এডিথ্রি মিশিয়ে দিতে হবে।

৬/ ১১ থেকে ১৫ দিনের ঔষধ ব্যবস্থাপনা

কিভাবে ব্যবহার করবেন: ১১ থেকে ১৩ দিনের মধ্যে মাইক্রোসাইড বা এমোডিস ব্যবহার করতে হবে। এটি মুরগির পাচনতন্ত্র সুরক্ষিত রাখবে।

কতটুকু ব্যবহার করবেন:

• ১০০ লিটার পানিতে ৫ মিলি মাইক্রোসাইড বা এমোডিস মিশিয়ে দিন।

৭/ ১৬ ও ১৭ দিনের ঔষধ ব্যবস্থাপনা

কিভাবে ব্যবহার করবেন: ১৬ তম দিনে সাদা পানি, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সি ব্যবহার করতে হবে। এতে মুরগির হাড়ের গঠন শক্ত হবে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

কতটুকু ব্যবহার করবেন:

• ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১০ মিলি ভিটামিন সি দিন।

৮/ ১৮ থেকে ২১ দিনের ঔষধ ব্যবস্থাপনা

কিভাবে ব্যবহার করবেন: এ সময় মুরগির শরীরের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য লিভার টনিক, জিঙ্ক, এবং সাদা পানি ব্যবহার করতে হবে।

কতটুকু ব্যবহার করবেন:

• ১ লিটার পানিতে ১ মিলি লিভার টনিক, ১ মিলি জিঙ্ক এবং ২ মিলি সাদা পানি মিশিয়ে দিতে হবে।

৯/ ২২ থেকে ২৫ দিনের ঔষধ ব্যবস্থাপনা

কিভাবে ব্যবহার করবেন: এই সময়ে টকসল ও ডিভেট ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি মুরগির হজম ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করবে।

কতটুকু ব্যবহার করবেন:

• ১০০ লিটার পানিতে ৫ মিলি টকসল এবং ৫ মিলি ডিভেট মিশিয়ে দিন।

১০/ ২৬ থেকে ৩০ দিনের ঔষধ ব্যবস্থাপনা

কিভাবে ব্যবহার করবেন: এই সময় ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ডি থ্রি এবং সাদা পানি ব্যবহার করা হবে।

কতটুকু ব্যবহার করবেন:

• ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম ভিটামিন সি, ১ মিলি ভিটামিন এ ডি থ্রি এবং ২ মিলি সাদা পানি মিশিয়ে দিন।

১১/ ৩১ থেকে ৩৫ দিনের ঔষধ ব্যবস্থাপনা

কিভাবে ব্যবহার করবেন: শেষ ৫ দিনে প্যারাসিটামল এবং সিপ্রোফ্লক্সিন ব্যবহার করা উচিত। এটি মুরগির শেষ বর্ধন নিশ্চিত করবে।

কতটুকু ব্যবহার করবেন:

• ১০০ লিটার পানিতে ৫ মিলি সিপ্রোফ্লক্সিন এবং ২ মিলি প্যারাসিটামল মিশিয়ে দিতে হবে।

ব্রয়লার মুরগির ৩০ দিনের ঔষধের তালিকা pdf

উপসংহার

ব্রয়লার মুরগি পালন একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া যেখানে সঠিক ঔষধ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুরগির ১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে প্রতিটি বয়সের জন্য নির্দিষ্ট ঔষধ এবং ভ্যাকসিন ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে পারবেন এবং তাদের দ্রুত বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারবেন। এই গাইডে উল্লেখিত ঔষধ ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করলে আপনার মুরগি সুস্থ থাকবে এবং আপনার লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বৃদ্ধি পাবে।