বাংলাদেশ পাসপোর্ট সেবার জগতে নতুন একটি অধ্যায়ের শুরু হল ই-পাসপোর্ট। আগের যে সমস্ত পাসপোর্টগুলো ব্যবহার করা হতো সে গুলোকে বলা হতো এমআরপি। আর এটাকে বলা হতো মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট। তবে এক্ষেত্রে ই-পাসপোর্ট গুলোতে সুরক্ষার দিক দিয়ে বেশ কিছু সমস্যা ছিল। বাংলাদেশ সরকার 2021 সালের নভেম্বর মাসে পুরোপুরিভাবে ই পাসপোর্ট সেবা চালু করেছে। তাই আজকে আমরা আপনাদেরকে ই পাসপোর্ট ফি কত এবং এর টাকা জমা দেয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আপনাদেরকে তুলে ধরব।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য পাসপোর্ট সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে গুলোতে বিভিন্ন অফিস স্থাপন করেছে বাংলাদেশ সরকার। আর এই সমস্ত অফিসগুলোতে ই পাসপোর্ট সেবা পাওয়া সম্ভব। হারি পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য আপনাকে আলাদাভাবে অন্য কোন পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই দেশের প্রত্যেকটি পাসপোর্ট অফিসে এখন কি পাসপোর্ট সেবা পাওয়া যাচ্ছে। আর ই পাসপোর্ট এর সেবা এমআরপি পাসপোর্টের মতোই রয়েছে তবে কিছু ক্ষেত্রে তার পরিবর্তন আছে। তবে পরবর্তী সময়গুলো থেকে সব পাসপোর্টধারীরা কি পাসপোর্টধারীর হয়ে যাবে এবং করতে হবে বাধ্যতামূলক।
ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন কিভাবে করবেন
ই-পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমেই ই পাসপোর্ট এর আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম টি পাওয়ার জন্য আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে অথবা অনলাইনের মাধ্যমে ই পাসপোর্ট এর আবেদন ফরম পাওয়া যাবে। এরপরে ভালোমতো ফরমটি পূরণ করার পরে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি ধরা হয়েছে সেই আবেদন ফি নিকটস্থ যেকোনো ব্যাংকের মাধ্যমে আপনি জমা দিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে হবে। ই পাসপোর্ট এর টাকার পরিমান নির্ধারিত হয়ে থাকে পাসপোর্ট এর পাতা সংখ্যার উপর। সেইসাথে মেয়াদ এবং ডেলিভারির ওপর নির্ভর করে। টাকার পরিমান ৪,০০০ থেকে শুরু করে ১৪,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে
বিদেশ যাওয়ার আগে যেগুলো জানা জরুরী
ই পাসপোর্ট আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
কি পাসপোর্ট আবেদনের জন্য নির্ধারিত কিছু কাগজপত্র রয়েছে সেগুলো অবশ্যই পুরন করতে হবে সেইসাথে আবেদনকারীকে 18 বছরের কম এবং 65 বছরের বেশি বয়সী আবেদনকারীকে কেবল মাত্র পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট পাবেন।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- আবেদনপত্রের এক কপি ফটোকপি
- অ্যাপার্টমেন্ট শিডিউলের একটি ফটোকপি
- পেমেন্ট স্লিপ এর একটি ফটোকপি
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- পাসপোর্ট এবং প্রয়োজনীয় ডাটা এর ছবি
- পাসপোর্ট সাইজের তিন কপি ছবি
- বর্তমান ঠিকানা একটি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
ই পাসপোর্ট ফি কত ২০২২
সাধারণত পাঁচ বছর মেয়াদী পর্যন্ত 48 পাতার পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে ফ্রী ধরা হয়ে থাকে 4,025 টাকার মতো এটি যথাক্রমে 6325 টাকা অথবা 6625 টাকা হতে পারে তবে জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্টধারী সেবার জন্য কিছুটা কমবেশি হতে পারে। নিয়মিত ডেলিভারিতে ই পাসপোর্ট এর জন্য সময় লাগতে পারে 15 কার্যদিবসের মত এবং জরুরী ভিত্তিতে ই পাসপোর্ট পাওয়ার সময় লাগবে 7 কার্যদিবস অথবা দুই কার্যদিবসের মধ্যে।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট এর জন্য চৌষট্টি পাতার ই পাসপোর্ট প্রদান করে থাকে। আর এই ই-পাসপোর্ট পেতে হলে আপনাকে খরচ করতে হবে 6325 টাকা থেকে শুরু করে 8 হাজার 350 টাকা এবং 12000 টাকার মতো খরচ করা লাগবে। এক্ষেত্রে নরমাল এবং জরুরী এবং অতি জরুরি এ ক্ষেত্রে ফি প্রদান করতে হবে পর্যায়ক্রমে আপনি সাত দিন থেকে শুরু করে দুই দিন অথবা নর্মাল 15 দিনের মধ্যেই ই পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবেন।
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন | ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি ২০২২
১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট 2022
বর্তমানে আপনি দশ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করতে পারবেন 10 বছরের মধ্যে আপনাকে 48 পাতার একটি পাসপোর্ট দেওয়া হবে যা পরবর্তীতে আপনি প্রয়োজনমতো রিনিউ করে নিতে পারবেন আর এই পাসপোর্ট করতে কত টাকা খরচ হবে এবং কিভাবে করবেন নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
10 বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে
10 বছর মেয়াদী 48 পাতার ই পাসপোর্ট এর জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে পাঁচ হাজার 750 টাকা এবং জরুরী এর জন্য খরচ করতে হবে 8050 টাকার মতো আর তাছাড়া আপনি যদি অতীব জরুরী পাসপোর্ট করতে চান তাহলে 13 হাজার 350 টাকা খরচ করতে হবে। এক্ষেত্রে ডেলিভারি আপনি সাত দিন থেকে 15 দিনের মধ্যেই পেয়ে যাবেন আর অতীব জরুরী ক্ষেত্রে দুই দিনের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পাবেন তবে সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে 10 হাজার 350 টাকা খরচ করা লাগবে এটি শুধুমাত্র অতি জরুরি সেবার জন্যই খরচ হয়ে থাকে।
10 বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করার জন্য
10 বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করার জন্য বাংলাদেশের যেকোন পাসপোর্ট অফিসে গেলেই আপনাকে একটি আবেদন ফরম দিবে এবং এই আবেদন ফরম টি ভালোমতো পূরণ করার পরে প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করে আপনি দশ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে অবশ্যই আপনাকে জরুরী এবং অতি জরুরী বিষয়টি ভালোমতো ফলো করে তারপরেই ফি প্রদান করতে হবে আর আপনি যদি নরমাল ভাবে নিতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই 5750 টাকা খরচ করতে হবে।
সোনালী ব্যাংক প্রবাসী লোন ২০২২ কিভাবে পাবেন দেখে নিন
ই পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম
বর্তমানে বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্ট এর টাকা আপনি জমা দিতে পারবেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই আবেদন করার পূর্বেই ই-পাসপোর্টের টাকা অনলাইনের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে হবে এছাড়াও আপনি প্রিমিয়াম ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সোনালী ব্যাংক সহ কয়েক ধরনের ব্যাংকের মাধ্যমে আপনি পাসপোর্ট ফি প্রদান করতে পারবেন।
আপনি আপনার নিকটস্থ ব্যাংকে গেলেই আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন যে আমি পাসপোর্ট এর জন্য ফি প্রদান করব তাহলে আপনাকে তারা চেকের মাধ্যমে খুব সহজেই ই পাসপোর্টের ফি প্রদান করে দিবে তাই আপনি সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
ই পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে
ই পাসপোর্ট করতে সাধারণত কয় ধরনের টাকা আপনাকে পেয়ে করা লাগতে পারে 48 পাতার জন্য 5 বছর মেয়াদী এক্ষেত্রে আপনার খরচ হবে 4025 টাকা জরুরী ভিত্তিতে 6025 টাকার মতো এবং অতি জরুরী ক্ষেত্রে 8025 টাকা।
এবং পরবর্তীতে তা যদি আপনি 48 পাতারি পাসপোর্ট নিতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে পাঁচ বছরের জন্য খরচ করা লাগবে 6325 টাকা এবং জরুরী ক্ষেত্রে 8625 টাকা এবং অতি জরুরী ক্ষেত্রে 12075 টাকার মতো খরচ করা লাগবে এখানে আপনি দুইভাবেই করতে পারবেন 15 বছর মেয়াদী আর 10 বছর মেয়াদী।
তবে দশ বছর মেয়েদের ক্ষেত্রে অবশ্যই 8550 টাকা লাগবে এবং জরুরী ক্ষেত্রে লাগবে 10 হাজার 350 টাকা এবং অতি জরুরী ক্ষেত্রে লাগবে 13 হাজার 800 টাকার মতো। এইখানে নির্ভর করে সম্পূর্ণটা আপনি কত বছর মেয়াদী এবং তার পাসপোর্ট নিতে যাচ্ছেন সেটার উপর। তবে অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে আপনি জরুরী না সাধারন নাকি অতি জরুরী সেবা নিতে চাচ্ছেন।
বিদেশ যাওয়ার জন্য কোন ব্যাংক লোন দেয় দেখে নিন
পাসপোর্ট রিনিউ ফি কত ২০২২
কি পাসপোর্ট নবায়ন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে 4140 টাকা খরচ করতে হবে এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন বছরের মধ্যেই 4485 টাকা। মেয়াদ শেষের চার বছরের মধ্যে হলে আপনাকে 4830 টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। সেই সাথে পাঁচ বছরের মধ্যে যদি আপনার মেয়াদ শেষ হয় তাহলে 5175 টাকা খরচ করা লাগবে।
ই পাসপোর্ট কত দিনে পাওয়া যায় ২০২২
ই পাসপোর্ট সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সাধারণ নাকি জরুরী না অতি জরুরী ভাবে আপনি নিতে চাচ্ছেন সেই বিষয়টি আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে এটা নিশ্চিত হওয়ার পরেই আপনাকে প্রয়োজনীয় পেটের মধ্যে আপনাকে ই-পাসপোর্ট হাতে দিয়ে দিলে সে ক্ষেত্রে আপনার সময় লাগতে পারে দুইদিন সাত দিন অথবা 15 দিন।
আপনি যদি জরুরি ভিত্তিতে নিতে চান সেক্ষেত্রে আপনার সাত দিন সময় লাগবে এবং তার থেকেও যদি আপনি অতি জরুরি ভাবে নিতে চান তাহলে দুই দিন লাগবে। পরবর্তীতে যদি আপনি সাধারণ এবং নরমাল টা নিতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে 15 দিনের মতো সময় দেওয়া লাগবে এই ক্ষেত্রে কিন্তু টাকার পরিমাণ কমবেশি হয়ে থাকে আপনি যদি জরুরি ভিত্তিতে নিতে চান তাহলে বেশি টাকা খরচ করা লাগবে আর আপনি যদি নরমাল হবে নিতে চান তাহলে কম টাকা খরচ করা লাগবে।
বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় | ইতালিতে বেতন কত?
ই পাসপোর্ট ফি জমা ব্যাংক
বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংকের মাধ্যমে আপনি ই-পাসপোর্টের ফি জমা দিতে পারবেন, ব্যাংক এশিয়া, ডাচ বাংলা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক এসমস্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আপনারা ই পাসপোর্ট ফি জমা দিতে পারবেন সেক্ষেত্রে আপনাকে সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংক ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে আপনি পাসপোর্টের টাকা জমা দিতে পারবেন।
পাসপোর্টের ফি সাধারণত খুব একটা তেমন পরিবর্তন হয় না এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই টাকার পরিমাণ এবং পাসপোর্ট এর আবেদন করার জন্য ওয়েবসাইটে বিস্তারিতভাবে দেওয়া থাকে। তবে এক্ষেত্রে সি এর বাইরে তেমন কোন টাকার প্রয়োজন নেই বললেই চলে।
আপনারা অনেক সময়ই ফলো করে দেখবেন পাসপোর্ট করতে গেলে পাসপোর্ট অফিসের দালালরা বেশি পরিমাণ টাকার জন্য আবেদন করে থাকে আপনাদের কাছে বিনিময়ে তারা আপনার পাসপোর্ট বাসায় পৌছে দেওয়ার অঙ্গীকার করবে তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই এ সমস্ত দালালকে এড়িয়ে চলবেন এসমস্ত দালাল আপনার টাকা মেরে দিতে পারে তাই তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সঠিক তথ্য প্রমাণ দিয়ে যদি আপনি অনলাইনের মাধ্যমে করে থাকেন তাহলে খুব সহজেই ই পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবেন।
সাবধানতা
বর্তমানে দালালরা আপনার কাছে এসে অনেকটা ভয় দেখাতে পারে যে অতিরিক্ত টাকা না দিলে পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে না বা আপনার ভেরিফিকেশন প্রসেস আটকে যাবে এরকম নানা ধরনের সমস্যার কথা আপনাদেরকে বলতে পারে এসবে অবশ্যই কান দিবেন না। এরা এক ধরনের প্রতারক আপনি সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে থাকলে পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় আপনার কোনো রকমের সমস্যা হবে না। তবে আপনি যদি জরুরি ভিত্তিতে ই পাসপোর্ট এর প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আগে থেকেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর জন্য আপনার নিকটস্থ থানার মাধ্যমে একটি আবেদন করে রাখবেন এক্ষেত্রে আপনার জন্য অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন