ভারতীয় টিভি সিরিয়াল গুলো দেখার কারণে অনেকেই ভারতের কসমেটিকস পণ্য কিনার চিন্তাভাবনা করে থাকেন। ভারত থেকে কসমেটিক আমদানি করে অনেকেই বিজনেস করার চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন তবে এই কসমেটিক্স আনার জন্য আপনার কিছু নিয়ম এবং লাইসেন্স করার প্রয়োজন পড়ে তাই এই নিয়ে আজকে আমরা বিস্তারিতভাবে কনটেন্ট এর মাধ্যমে তুলে ধরেছি কিভাবে আপনারা ভারত থেকে কসমেটিক আমদানি করতে পারবেন এই নিয়ে আজকের আলোচনা।
অনেকেই মনে করে থাকে যে ভারতীয় কসমেটিকস গুলি অত্যন্ত ভালো এবং অরজিনাল মানের প্রোডাক্ট। ইউনিলিভার পণ্য বাংলাদেশের বিক্রি হয়ে থাকে তাছাড়াও অন্যান্য বিদেশি কোম্পানি রয়েছে। তার মধ্যে সবথেকে আমরা যে সমস্ত কসমেটিকস ব্যবহার করে থাকি তার সাধারণ তো বেশিরভাগই ভারত থেকে আমদানিকৃত কসমেটিক্স পণ্য। তাই আপনাদেরকে দেখাবো কিভাবে ভারত থেকে কসমেটিক আমদানি করবেন এই নিয়ে।
প্রথমে বলে রাখি ভারত থেকে কসমেটিক আমদানি করতে হলে আপনাকে কয়েকটি স্টেপ ফলো করতে হবে তাছাড়া আপনি ভারত থেকে কসমেটিকস পণ্য আমদানী করতে পারবেন না এবং এই কসমেটিকস পণ্য আমদানি করে আপনি বাংলাদেশের মধ্যে একটি লাভজনক ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবেন।
কেন ভারত থেকে কসমেটিক আমদানি করবেন
অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত থেকে কসমেটিকস পণ্য নিয়ে আসলে বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে কারণ তাদের টিভি সিরিয়াল সহ বিভিন্ন ভাবে মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে তারা প্রচারণা করে থাকে এক্ষেত্রে জনগণের প্রথম চাহিদা ভারতীয় কসমেটিক্স তাই এই ক্ষেত্রে বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে তাই ভারতীয় কসমেটিকস বেশি হয়। সাধারণত সমস্ত কোম্পানি করে থাকে।
আপনি যদি কোন কসমেটিকস দোকানে গিয়ে কিছুক্ষণ সময় ওয়েট করবেন দেখবেন মানুষটা সাধারোনত ইন্ডিয়ান প্রোডাক্ট এর উপর চাহিদা বেশি দেখাচ্ছে এবং বেশি মাত্রায় কিনে থাকে তাই অবশ্যই আপনি যদি ভারতীয় কসমেটিকস আমদানি করে বিক্রি করতে পারেন তাহলে অন্যান্য প্রোডাক্ট এর তুলনায় অন্যান্য দেশের আমদানিকৃত পণ্যের তুলনায় বেশি মাত্রায় পাবেন।
আরো পড়ুন: মালয়েশিয়া সোনার দাম কত
ভারত থেকে কসমেটিক আমদানি লাইসেন্স
বৈধভাবে থেকে পণ্য আমদানি করতে হলে অবশ্যই আপনার একটি লাইসেন্স করতে হবে। আমদানিকৃত লাইসেন্স ছাড়া কোনভাবেই আপনি বিদেশ থেকে ভারত থেকে প্রোডাক্ট নিয়ে আসতে পারবেন না। ভারত থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি লাইসেন্স কিভাবে করতে হবে তা অন্য একটি আর্টিকেল এর মধ্যে বিস্তারিত ভাবে একটি পোস্ট তৈরী করব সেখান থেকে আপনারা দেখে নিতে পারবেন।
তবে এক্ষেত্রে আপনাদের সংক্ষিপ্ত ভাবে বলা যায় যে আমদানি লাইসেন্স করতে হলে অবশ্যই আপনার একটি আগের ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। ইটের লাইসেন্স তৈরি করার পরে আপনাকে ভ্যাট প্রদান করতে হবে প্রথমে। তারপরে আমদানি নিবন্ধকের কার্যালয় এর মাধ্যমে তা জমা দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে আপনি কোন এজেন্টের মাধ্যমে যদি করতে চান তাহলে এক্ষেত্রে কম সময়ের মধ্যেই আমদানি লাইসেন্স তৈরি করতে পারবেন।
পণ্য আমদানি লাইসেন্স করতে খরচ কত
আপনি যদি ভারত থেকে বিশ্বের অন্যান্য বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে চান তাহলে এক্ষেত্রে আপনাকে একটি লাইসেন্স করতে হবে আর এই লাইসেন্স করতে খরচ হবে ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ হাজার পর্যন্ত। তবে আমদানি লাইসেন্স করতে হলে আপনাকে সর্ব প্রথমে একটি ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করতে হবে তারপর একটি এজেন্ট দিয়ে আপনি সরাসরি করে নিতে পারবেন এক্ষেত্রে অনেকটা কম খরচে এবং কম সময়ের মধ্যেই করে নিতে পারবেন।
ভারতীয় পণ্য স্যাম্পল দেখা
আপনি যদি অনলাইনে ভারতীয় শেয়ারের মাধ্যমে কথাবার্তা বলে ফাইনাল অর্ডার করার আগে অবশ্যই সেম্পল দেখে তারপরে আপনাকে ডিসিশন নিতে হবে আপনি প্রোডাক্ট নিবেন কিনা। যদি সরাসরি আপনি ভারতে গিয়ে পণ্য দেখে আসেন তবে এক্ষেত্রে স্যাম্পল আমদানি করার কোনো দরকার পরবে না। কারণ ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে গেলে বা স্যাম্পল আমদানি করতে হলে আপনাকে৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার মতো খরচ করা লাগতে পারে।
আরো পড়ুন: টিকটক থেকে টাকা ইনকাম পদ্ধতি। টিকটকে ভাইরাল হওয়ার উপায়
তাই আপনি যদি এই পরিমাণ টাকা খরচ করতে চান তাহলে আপনি সরাসরি 10000 টাকা খরচ করলে ইন্ডিয়াতে গেলেই আপনার প্রোডাক্ট এর স্যাম্পল দেখি আসতে পারবেন সেইসাথে আপনি কিছু স্যাম্পল নিয়ে আসতে পারবেন আপনার কাজের জন্য। তাই উচিত হবে প্রথম অবস্থায় যদি আপনি এত টাকা খরচ করতে চান তাহলে নিজেকে এই ভারত থেকে পণ্য এর স্যাম্পল নিয়ে আসতে পারবেন এক্ষেত্রে পাঁচ থেকে দশ পিস যদি নিয়ে আসেন আরে সমস্ত কাস্টমারদের ফিডব্যাক পেতে সাহায্য করবে।
ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে এক্সপোর্ট কোড
ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে হলে ইম্পোর্টার এবং এক্সপ্লোরের কোড থাকা লাগবে এছাড়া আপনি ভারত থেকে পণ্য আমদানি রপ্তানি করা যাবেনা বিক্রেতা দোকানদার এই কোড না থাকে তাহলে এরা এজেন্টের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি কাজ করিয়ে থাকে তবে অনেক কোম্পানি আছে যারা এসব করিয়ে দিবে এর বিনিময়ে আপনাকে টাকা প্রদান করতে হবে।
আবার অনেক কোম্পানি আছে এসব করিয়ে দেওয়ার কারণে কিছুমাত্র ফি নেওয়া হয় পরবর্তীতে যখন আপনার প্রোডাক্ট হাতে পৌঁছাবে আপনার দোকানে পণ্য শুরু হবে তখন আপনাকে পুনরায় আবার তাদের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হবে। তবে সাধারণত আপনাকে পণ্য হাতে পাওয়ার পরেই টাকা পরিশোধ করতে হবে এমন সিদ্ধান্তই বর্তমানে নেওয়া হয়েছে।
Proforma Invoice সংগ্রহ করা
পরবর্তী কাজ হলো ছেলের কাছ থেকে PI সংগ্রহ করা। পারফরম্যান্স ইনভয়েস কি আমদানিতে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এটা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আমরা অন্য একটি পোষ্টের মাধ্যমে তুলে ধরব তবে এক্ষেত্রে আপনারা কিছুটা ধারণা নিয়ে রাখতে পারেন। PI আনতে হলে কোম্পানির একটি সিল ব্যবহার করতে হবে এবং সেইসাথে সাইন দিয়ে যে ব্যাংক থেকে এলসি করতে চান সে ব্যাংকের মাধ্যমে চলে যাবে।
PI আনতে হলে আপনার যে সমস্ত পণ্য আমদানি করছেন পণ্যের দাম, ওজনের ,পরিমাণ ,এবং আমদানি কারকের নাম, এবং রপ্তানিকারক এর নাম, আমদানিকারকের ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার সহ বিস্তারিত তথ্য দিয়ে তারা সম্পূর্ণভাবে সেখানে উল্লেখ করতে হবে।
ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে ট্যাক্স কত
ভারত থেকে আমদানি করতে হলে ট্যাক্স প্রদান করতে হবে। তবে এটি একটি জটিল বিষয়। এ কত টাকা ট্যাক্স প্রদান করতে হবে তা অনেকেরই ধারণা নেই। তবে আপনাদের জেনে রাখা উচিত যে যেসব পণ্য আমাদের দেশে উৎপাদন হয়ে থাকে সেসব পণ্য যদি আপনি আমদানি করে থাকেন তাহলে টেক্স বেশি দিতে হয়।
তবে এক্ষেত্রে আমাদের কাছে একটি ধারণা অনুযায়ী HS CODE টি থ্রি পিস এর জন্য অধিক যুক্তিযুক্ত বিষয়টি মনে হয়েছে। ৩৩০৫৯১০০ এটা টোটাল ট্যাক্স আসে১২৭.৫০ টাকা। তারমানে এখানে বোঝা যাচ্ছে যে আপনি ১০০০ টাকার ভেতরে যদি কসমেটিকস পণ্য ভারত থেকে আমদানি করেন তাহলে ট্যাক্স দিতে হবে ১২৭.৮ টাকা তবে এক্ষেত্রে কম বেশি হতে পারে।
ভারত থেকে পণ্য আনতে এলসি করা
পরবর্তী স্টেপে আপনাকে PI নিয়ে একটা ব্যাংকে চলে যেতে হবে। আপনি যত ডলারের LC করাতে চান তাদেরকে বিষয়টি বলবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাদের জেনে রাখা উচিত যে LC করাতে হলে আপনার পণ্যের দাম এবং ওজন বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করতে হবে।
সাবধানতার সঙ্গে LC ফরমটি পূরণ করতে হবে এবং বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করতে হবে। আপনি যে পণ্য আমদানি করতে চাচ্ছেন তার দাম এবং আমদানিকারকের নাম এবং HS কোড এবং ফুল ভ্যালু সেখানে উল্লেখ করতে হবে কোনোভাবেই যেন এইচএস কোড ভুল না হয় সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।
আরো পড়ুন: ল্যাকমি নাইট ক্রিম এর দাম কত | ল্যাকমি নাইট ক্রিম এর উপকারিতা
তারপরেই একটি ব্যাংকের কাগজ সেলারের কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে সেটা যাচাই-বাছাই করার পরে ট্রাকিং চালান এবং এল সি ফরম কমের্সিয়াল ইনভয়েস প্যাকিং লিস্ট পুনরায় পাঠাবে এবং ব্যাংক সকল কাগজপত্র সাইন করে আপনাকে সেটা দিয়ে দিবে।
ভারতীয় পণ্য ছাড়ানো করানো
তারপরে সমস্ত পণ্যগুলো যখন বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে আমদানি করবেন। কিন্তু ভারত থেকে কসমেটিক আমদানি করতে অনেক সমস্যা কারণ ভারত থেকে অধিকাংশ পণ্য চোরাই পথে আমদানি হয়ে থাকে বিভিন্ন ভারত থেকে কসমেটিক আমদানি করে থাকে এজন্য তাদের একটু সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। আর এই সমস্ত পণ্য আমদানি করার ক্ষেত্রে সাধারণত টেক্স সারাই আমদানি করে থাকে।
তাই আপনি যখন লিগ্যাল ভাবে পণ্য আমদানি করতে যাবেন তখন আপনাকে বৈধপথে আমদানি করতে হবে তখন সঠিক ট্যাক্স পরিশোধ করেই আপনাকে আমদানি নিশ্চিত করতে হবে ফলে আপনি চোরাকারবারিদের সাথে কোন রকমের সংযোগ স্থাপন করা যাবে না। কারণ যারা অবৈধ পথে পণ্য আমদানি করে থাকে তারা কম দামেই এ সমস্ত প্রোডাক্ট গুলো বিক্রি করে থাকে।
আরো পড়ুন: ছেলেদের ফর্সা হওয়ার ডাক্তারি ক্রিম ও ছেলেদের ভালো নাইট ক্রিম
আবার আপনি যদি ভারতীয় পণ্য নিয়ে এসে বাংলাদেশি বাজারে বিক্রি করতে চান তাহলে আপনাকে বিএসটিআই করতে হতে পারে এক্ষেত্রে আপনাকে অতিরিক্ত খরচ প্রদান করতে হবে। কেননা এটি বাংলাদেশি বাজারে বৈধ করার জন্য বৈধ ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য আমদানি করা প্রোডাক্টগুলো বিএসটিআই করতে হয়।
তাছাড়াও আপনি ভারতীয় কিছু প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেরাও কিন্তু বাংলাদেশের পণ্য একটি প্রতিষ্ঠান খুলে নিজেদের পণ্য করতে পারবেন। ফলে তাদের সাথে আপনি দাম এবং প্রতিযোগিতায় পেরে উঠতে হবে। আজকে আমাদের ভারত থেকে কসমেটিক আমদানি এর বিষয় নিয়ে বিস্তারিত।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন