আজকে আমরা আলোচনা করব নর্মাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ এবং নরমাল ডেলিভারি উপায় কি এবং এবং কোন লক্ষণগুলো দেখা দিলে বুঝতে পারবেন আপনার নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আমরা আজকে এই আর্টিকেলের মধ্যে আলোচনা করেছি আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা নরমাল ডেলিভারি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জেনে নিবেন।
নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ সমূহ
গর্ভের সময় কাল ধরা হয় সাধারণত 40 সপ্তাহ বা 280 কিংবা 9 মাস 7 দিন। শেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকেই গর্ভধারণের প্রথম দিন হিসেবে ধরা হয়। এবং শেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকেই প্রসবের তারিখ নির্ধারণ করে থাকে। এক্ষেত্রে প্রতি মাসকে 30 দিন হিসাবে গণনা করা হয়। এই তারিখের দুই সপ্তাহ আগে অথবা দুই সপ্তাহ পরে যে কোন তারিখে প্রসব হতে পারে। 37 সপ্তাহ থেকে 42 সপ্তাহের মধ্যে যেকোনো তারিখেই প্রসব বেদনা হতে পারে।
আপনার যদি 37 সপ্তাহ পূরণ হওয়ার আগেই প্রসবের বেদনা দেখা দেয় অবশ্যই আপনার ডাক্তার কে জানাতে হবে। আপনার হয়তো পিটার্মলেভার হতে পারে। 37 সপ্তাহের আগে যদি কোন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তাৎক্ষণিকভাবে আপনার নিকটস্থ কোনো ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
মায়ের শরীর প্রসবের জন্য প্রস্তুত কিনা তার লক্ষণ
ডাক্তারঃ আপনার ডেলিভারির যে তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছে সেই তারিখ অনুযায়ী গর্ভাবস্থা শেষের দিনগুলোতে অথবা শেষ সপ্তাহে এবং মাসের শেষের দিকে আপনি প্রস্রাবের পরবর্তী লক্ষণ গুলো খেয়াল করবেন।
এটা যদি আপনার প্রথম সন্তান হয়ে থাকে তাহলে ডেলিভারির কয়েক সপ্তাহ আগে আপনি লাইটেনিং বা হালকা লাগা ভাব অনুভব করতে পারবেন। আর শিশুর নিচের দিকে নেমে আসা কেই লাইটেনিং বলা হয়।
গর্ভ অবস্থায় বাচ্চা নিচের দিকে চলে আসার কারণে বুকের হাড়ের ঠিক নিচে চাপ এতদিন ধরে পড়তো সেটা এখন কমে যাবে যার ফলে আপনার নিঃশ্বাস নেওয়া টা অনেকটা সহজ মনে হবে। এছাড়া যদি আপনার গর্ভ অবস্থায় বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা হয় সেটাও সে সময়ে কিছুটা কমে যেতে পারে।
সিজার অপারেশন খরচ | নরমাল ডেলিভারি খরচ
তবে আপনাদের মনে রাখতে হবে যে এটা যদি আপনার প্রথম সন্তান না হয় তাহলে একদম প্রসব শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত লাইটেনিং নাও হতে পারে অথবা বিভিন্ন ধরনের জ্বালাপোড়া আগের মত থাকতে পারে।
বরাবর ব্রাকটোন হিক্স কনস্ট্রাকশন হওয়া
ঘন ঘন ব্রাকটোন হিক্স তীব্র মাত্রা হতে পারে। কনস্ট্রাকশন বা ফলস লেভেলের পেইন এর মাধ্যমে আপনি প্রিল্যাব এর সিগন্যাল পেতে পারেন। জরায়ুর মুখ পাতলা প্রশস্ত হতে পারে সত্তিকারের প্রসবের জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে। অনেক সময় নারীদের এই মুহূর্তে পিরিয়ডের মত ক্র্যাম্প হতে পারে।
সার্ভিক্স বা জরায়ুর মুখের পরিবর্তন
ডেলিভারির কিছুদিন অথবা কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই সারভিক্সের কানেকটিভ টিস্যু পরিবর্তন হওয়ার ফলে সার্ভিক্স ধীরে ধীরে পাতলা প্রশস্ত হতে পারে। সার্ভিক্স পাতলা হয়ে যাওয়াকে এফেসমেন্ট বা ডাইরেকশন বলে।
আপনার যদি পূর্বে শিশু জন্ম দেয়ার অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে 40 সপ্তাহ হয়ে যাওয়ায় 1 সেন্টিমিটার এর মত প্রশস্ত হয় তবুও একথা নিশ্চিত নই যে আপনার প্রস্রাব করার সময় হয়ে গেছে। তাই 1 সেন্টিমিটার ফাঁকা হওয়ার পরেও আপনাকে নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে আপনার প্রসবের সন্নিকটে চলে এসেছেন।
নরমাল ডেলিভারি হাসপাতাল কোনটা ভাল দেখে নিন
ডেলিভারির সময় যখন সন্নিকটে চলে আসে তখন সার্ভিক্স ঠিকঠাকভাবে ফেস বাডায়া লেট হচ্ছে তখন যৌনি থেকে বের হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনাকে বুঝে নিতে হবে যে আপনার জরায়ুর মুখের পরিবর্তন আসছে এবং ডেলিভারি নিকট অতি সন্নিকটে।
অল্প পরিমাণ রক্তপাত হওয়া
সার্বিক যখন কোমল বা এবং প্রশস্ত হতে থাকে তখন হালকা রক্ত যুক্ত গোলাপি যৌনি স্রাব বের হতে পারে যখন মিউকাস নিঃসৃত হয় তখন এর সাথেই যদি রক্ত বের হয় তাহলে বিরক্ত লেগে থাকতে পারে আবার এমনিতেও রক্তপাত হতে পারে। অনেক সময় যৌন মিলন অথবা যৌন পরীক্ষা করার সময় বাধাগ্রস্ত হয় যার ফলে অতি নিকটে প্রসবের সম্ভাবনা না থাকলেও রক্তপাত ঘটতে পারে।
এক্ষেত্রে রক্তপাত যদি বেশি মাত্রায় দেখা দেয় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে অথবা আপনাকে ফোন কলের মাধ্যমে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
নরমাল ডেলিভারির আগমুহূর্তে লক্ষণ
শিশুর নিম্নভাগে চলে আসা কেই প্রসবের একদম পূর্ব মুহূর্ত হিসেবে ধরা হয় বিশেষত এটা যদি আপনার প্রথম সন্তান না হয়। মিউকাস প্লাস বেরিয়ে যাওয়া নির্ভর করে সার্ভিক্স কখন মুখ খুলছে সেটার উপর নির্ভর করে। কখনো কখনো প্রসবের কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ আগেও এটা হতে পারে আবার প্রসবের একদম আগ মুহূর্তেও এটি দেখা যায়। যেটা আপনি হয়তো আলাদা করে কখনোই খেয়াল করতে পারবেন আবার কখনো পারবেন না।
পানি ভাঙ্গা:
এমনিওটিক ফ্লয়েড ভর্তি যেতে শিশু বাস করে সে থলে যখন ফেটে যায় তখন এমনিওটিক প্রজননের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এমনিওটিক ফ্লয়েড একেবারে অনেক বেশি করে বের হতে পারে অথবা অল্প অল্প করে ও বের হতে পারে একেই সাধারণত পানি ভাঙ্গা বলা হয়। যেভাবেই হোক না কেন তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তার অথবা নার্সের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
বাচ্চার ওজন কত হলে নরমাল ডেলিভারি হয়
অধিকাংশ সময় নারীদের ক্ষেত্রে পানি ভাঙ্গার একমুহূর্তেই ব্যথার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে তবে কিছু কিছু নারীদের বেলায় প্রসব শুরুর আগেই পানি ভেঙ্গে যায় যখন এমনটি ঘটে তখনই বুঝতে হবে আপনার প্রসাবের সময় একেবারে ঘনিয়ে এসেছে।
প্রসব শুরু হয়েছে কিভাবে বুঝবেন
প্রসবের সময় যখন জরায়ু সংকোচিত হবে তখন আপনার পেটে প্রচুর পরিমাণ টান ও চাপ অনুভব করবেন। এবং সংকোচনের মাঝে বিরতি দিবে সেই ব্যথামুক্ত টান লাগার অনুভূতিটা আরেকটু কমে যেতে পারে। সার্ভিক্স ডায়ালেট হওয়ার কারণে প্রসাবের বেদনা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং এটি তীব্র আকার ধারণ করতে পারে এবং এটি দীর্ঘসময় হতে থাকে।
জরায়ু সংকোচন হচ্ছে কিনা বোঝার উপায় হচ্ছে যখন ব্যথা হয় ঠিক তখনই জরায়ু সংকুচিত হয় তখন পেটে হাত দিলেই অনুভব করা যায় যে জরায়ু শক্ত আছে। আর ঠিক তার পরক্ষনেই যখন ব্যথা নেই অর্থাৎ জরায়ু স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে তখন পেটে চাপ দিলে হাত দিয়ে অনুভব করা জরায়ু নরম আছে।
প্রসবকালীন সংকোচনের সময় এবং মাঝামাঝি সময়ে পিঠের নিম্নভাগে প্রচুর ব্যথা অনুভূত হতে পারে এসময় পিঠের নিম্নভাগে ব্যথার মানে হল পিঠের বিপরীতে চাপ দিতে থাকে এবং মাথা বের করার চেষ্টা করে। তবে কিছু কিছু গবেষণায় জানা গিয়েছে যে ব্যথার উৎস হিসেবে জরায়ুর কথা এখানে বলা হয়েছে।
ফলস পেইন এবং সত্তিকারের প্রসব বেদনা
ফলস পেইন এবং সত্তিকারের প্রসব বেদনা এটি বোঝা কিছুটা মুস্কিলেরই কাজ তবে প্রসব বেদনা কতটা তীব্র এবং কত সময় ধরে হচ্ছে কতক্ষণ পরপর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, ব্যথা পেটের কোন জায়গায় হচ্ছে নিম্নরূপ মাধ্যমে ভুল প্রসব বেদনা অর্থাৎ ব্র্যাকস্টোন হিক্স কনস্ট্রাকশন এবং সত্তিকারের প্রসব বেদনার মধ্যে পার্থক্য বোঝা সম্ভব।
ফলস লেবার পেইন
দৈর্ঘ্যের পার্থক্য থাকতে পারে ধীরে ধীরে তা বাড়ার সম্ভাবনা নেই একেকটি সংকোচনের মাত্র 30 সেকেন্ডের কম অথবা 2 মিনিটের বেশি সময় স্থায়ী হতে পারে। অনিয়মিত ভাবে এবং বিরতি দিয়ে দিয়ে এই ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
খুব বেশি একটা তীব্র হয় না এবং এটি ধীরে ধীরে তীব্রতাও বাড়ে না প্রথমে হালকা বা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। তবে এটি একেবারেই স্থায়ী হবে না। সংকোচন এর অনুভূতি পেটের সামনের দিক থেকেই হয়ে থাকে।
ফলস লেবার পেইন এর ক্ষেত্রে হাঁটাচলা, দাঁড়ানো, বিশ্রাম অর্থাৎ শরীরের হলে সংকোচন বন্ধ হয়ে যাই।
আসল প্রসব বেদনা
নিয়মিত বিরতিতে হয় এবং ধীরে ধীরে সংকোচন এর মাত্রা বাড়তে থাকবে। শুরু হওয়ার পর থেকেই সংকোচন স্থায়ী হওয়ার ক্রমশ বাড়তে থাকবে এবং প্রতি 30 সেকেন্ড থেকে 70 সেকেন্ড পর্যন্ত এটিই স্থায়িত্ব হতে পারে।
তবে আসল প্রসব বেদনার ক্ষেত্রে ব্যথা বাড়তেই থাকবে এবং একেবারে পরের সংকোচনের ব্যথা বেশি মাত্রায় হতে থাকবে। সংকোচন পেছন থেকে শুরু হয় এরপর সামনে চলে আসে যা অরু পর্যন্ত এটি ছড়িয়ে যেতে পারে।
আসল প্রসব বেদনার ক্ষেত্রে হাটা, বসে থাকা, সোয়া অবস্খাতেই থাকুক না কেন সংকোচনের ব্যথা ক্রমশ বাড়তেই থাকবে।
নরমাল ডেলিভারির জন্য কখন হাসপাতালে যাবেন
কখন হাসপাতালে আসা উচিত সেটা একেক জনের জন্য একেক রকম নির্দেশনা হতে পারে। তবে যেমন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভ অবস্থার ক্ষেত্রে সেটা একরকম আবার স্বাভাবিক অবস্থার জন্য আরেক রকম হতে পারে। সেই হিসেবে মায়ের বাসা হাসপাতাল থেকে কতটুকু দূরে অথবা প্রথম সন্তান কিনা এসব কিছু বিবেচনা করার পরেই ডিসিশন দেওয়া হয়।
আপনার গর্ভ অবস্থায় যদি না হয় তাহলে নিম্নোক্ত ব্যপারগুলো হওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
- 60 সেকেন্ড সময় ধরে সংকোচন হওয়া
- 5 মিনিট পর পর সংকোচন হওয়া
- এক ঘন্টা যাবৎ প্রসব বেদনা হওয়া
সংকোচন এর গণনা করা হয় একেবারে সংকোচন শুরু হওয়ার পর থেকে পরের সংকোচন শুরু হওয়ার সময় পর্যন্ত। এর মধ্যে কয়েকবার সংকোচন হবে তা একেকবার একেক টা করে গণনা করা হয়।
এরপরেও যদি আপনি নিশ্চিত নাও হতে পারেন যে এখন সময় হয়েছে কিনা তাহলে সরাসরি আপনি ডাক্তার কিংবা কোন নাচের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করতে হবে। অথবা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ধরনের যোগাযোগ না করলে অভিজ্ঞ কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে নেওয়া উচিত।
গর্ভবস্থায় শেষের দিকে খেয়াল রাখতে হবে
গর্ভবস্থা 37 সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি ভেঙ্গে যায় অথবা প্রসবের বেদনা শুরু হয়ে যায় সেক্ষেত্রে আপনার হয়তোবা প্রীট্রাম লেবর হতে পারে। যেমন লক্ষণ গুলো হল যৌনি থেকে রক্তপাত হওয়া অস্বাভাবিক যৌন স্রাব হওয়া পেলভিক চাপ লাগা পিঠের ব্যথা অনুভূত হওয়া।
আপনার যদি মনে হয় যে পানি ভেঙ্গে গেছে এমনটিক তরলের সাথে হলুদ ভাব সবুজ অথবা বাদামে কোন পদার্থ বের হচ্ছে তাহলে এটি মূলত মাকেনিয়ম উপস্থিতি প্রমাণ করে থাকে। এটি মূলত শিশুর প্রথম মল। এবং এটিই তার প্রথম উপস্থিতি প্রমাণ করে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন