গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দিতে কত টাকা লাগে? সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ

    গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দিতে কত টাকা লাগে


    বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে প্রধান শিল্প খাতে হলো গার্মেন্টস। আপনি যদি বাংলাদেশ গার্মেন্ট সেক্টরে বিনিয়োগ করতে চান সে ক্ষেত্রে আপনাকে কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব সহকারে জানতে হবে। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দিতে কত টাকা লাগে? ও অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে। 


    আজকে আমরা এই কন্টেন্টের মধ্যে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দিতে কত টাকা খরচ লাগে এবং প্রয়োজনীয় কি কি উপাদান প্রয়োজন মেশিন এবং অন্যান্য খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আজকে আমরা এই কন্টেন্টের মধ্যে আলোচনা করব। 


    গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দিতে কত টাকা লাগে দেখুন

    বাংলাদেশ একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে বিভিন্ন পর্যায়ের খরচের উপর মূলত নির্ভর করে থাকে। মূলত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির আকার, উৎপাদন ক্ষমতা এবং স্থানের উপর নির্ভর করে। মূলত বাংলাদেশের ছোট, মাঝারি, বড় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দেওয়ার খরচ নিচে উল্লেখ করা হলো:


    ১. গার্মেন্টসের জন্য জমি ক্রয়/বিল্ডিং ভাড়া খরচ

    • ছোট গার্মেন্টস: প্রতি মাসে ভাড়া ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। (১০০-২০০ কর্মী)
    • মাঝারি গার্মেন্টস: প্রতি মাসে ভাড়া ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা। (৩০০-৫০০ কর্মী)
    • বড় গার্মেন্টস: স্থায়ী বিল্ডিং নির্মাণ খরচ  থেকে ১৫ কোটি টাকা। (১০০০+ কর্মী)

    এছাড়াও আপনি যদি নিজের খরচে এবং জায়গা জমি যদি নিজের হয়ে থাকে তাহলে কিন্তু খরচ কম লাগবে। এবং আপনার যদি নিজের অনেক মালামাল থেকে থাকে তাহলে কিন্তু খরচের ভিন্নতা রয়েছে। 



    ২. মেশিন ক্রয় ও অন্যান সেটআপ খরচ

    • সেলাই মেশিন: প্রতি পিস ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা
    • ওভারলক মেশিন: প্রতি পিস ৬০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ টাকা
    • কাটিং মেশিন: ৮০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা
    • আয়রন ও ফিনিশিং মেশিন: ৫০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টাকা
    • গার্মেন্টসের আকার অনুযায়ী মোট মেশিন খরচ ১ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

    এক্ষেত্রে আপনি কতজন শ্রমিকের জন্য মেশিন কিনছেন এবং আপনার গার্মেন্টস এর আকার অনুযায়ী মূলত খরচ নির্ভর করবে। মূলত কম দামের মেশিন নিয়ে যদি গার্মেন্টস শুরু করে থাকেন তাহলে অল্প খরচের মধ্যেও শুরু করতে পারবেন। 


    ৩. গার্মেন্টস কর্মচারীদের বেতন

    গার্মেন্টস কর্মচারীদের সংখ্যা ও পদ অনুযায়ী বেতন কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন হয়। গার্মেন্টস কর্মীদের পদ অনুযায়ী বেতন নিচে উল্লেখ করা হলো:
    • সুপারভাইজার: ১৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা।
    • সিনিয়র অপারেটর: ১২,০০০ থেকে ১৮,০০০ টাকা।
    • জুনিয়র অপারেটর: ১০,০০০ থেকে ১৪,০০০ টাকা।
    • হেল্পার: ৮,০০০ থেকে ১২,০০০ টাকা।
    • প্রতি মাসে মোট বেতন খরচ: ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা হতে পারে।


    এক্ষেত্রে আপনি যদি মনে করেন যে আপনার কর্মীদের বেতনের পাশাপাশি বোনাস দিবেন তাহলে খরচ আরো বেশি পড়তে পারে। এছাড়াও কর্মীদের যদি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিতে চান তাহলে খরচ আরো বৃদ্ধি পাবে। 


    ৪. গার্মেন্টসের জন্য সরকার অনুমোদন ও লাইসেন্স খরচ

    গার্মেন্টস এর জন্য সরকার অনুমোদিত লাইসেন্স করতে এবং পরিবেশ অনুমোদন, ফায়ার সেফটি এবং ইলেকট্রিক লাইসেন্স এর জন্য খরচ করা লাগে। সাধারণত কি কি খরচ লাগে তা নিচে উল্লেখ করা হলো:

    • বিআইডিসি রেজিস্ট্রেশন: ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা।
    • ট্রেড লাইসেন্স: ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা।
    • পরিবেশ অনুমোদন: ১ থেকে ২ লাখ টাকা।
    • ফায়ার সেফটি ও ইলেকট্রিক লাইসেন্স: ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা।
    • অন্যান্য সরকারি ফি: ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা।

    এই খরচ গুলো মূলত যে কোন সময় পরিবর্তিত হতে পারে। তাই অবশ্যই আপনাকে এই খরচের চিন্তা মাথায় রেখে গার্মেন্টস দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন।


    ৫. গার্মেন্টসের জন্য অন্যান্য খরচ

    এছাড়াও সমস্ত কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরে গার্মেন্টস এর জন্য অন্যান্য খরচ কি কি লাগে তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
    • বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ: ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকা
    • নিরাপত্তা ও সিসিটিভি সেটআপ: থেকে ১৫ লাখ টাকা
    • অফিস ও অ্যাডমিন খরচ: ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা
    • মার্কেটিং ও ক্লায়েন্ট হ্যান্ডলিং খরচ: ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকা
    • সিকিউরিটি গার্ড: ১০ জন ২ লাখ টাকা। 

    এক্ষেত্রেই খরচ গুলো বছরের বিভিন্ন সময় পরিবর্তিত হয়ে থাকে। তাই আপনি যখন গার্মেন্টস দেবেন তখন এই বিষয়টি অবশ্যই আপনার নজরে রাখতে হবে। অন্যান্য বেশ কিছু ছোটখাটো খরচ রয়েছে যেগুলো এখানে উল্লেখ করা হয়নি। 


    আরো পড়ুন: ফিনিশিং সুপারভাইজার এর কাজ কি ও বেতন কত দেখুন


    গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির জন্য মোট খরচের হিসাব

    ফ্যাক্টরি আকারআনুমানিক বিনিয়োগ
    ছোট গার্মেন্টস (১০০-২০০ কর্মী)১-৩ কোটি টাকা
    মাঝারি গার্মেন্টস (৩০০-৫০০ কর্মী)৫-১০ কোটি টাকা
    বড় গার্মেন্টস (১০০০+ কর্মী)১৫-৩০ কোটি টাকা

    মূলত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্মী হিসেবে এটা আনুমানিক খরচ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে যদি আপনার বেশি কর্মী হয়ে থাকে এবং আরো জায়গা বড় নিতে চান এবং বড় পরিসরে করতে চান তাহলে এই খরচ আরো বৃদ্ধি পাবে। 


    গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি চালু করার আগে গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস

    • অর্থের ব্যবস্থা করুন: ব্যক্তিগত বিনিয়োগ, ব্যাংক ঋণ বা অংশীদারিত্ব ভিত্তিতে অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন।
    • সঠিক লোকেশন খুঁজুন: পোশাক শিল্পসমৃদ্ধ এলাকায় ফ্যাক্টরি স্থাপন করলে শ্রমিক পাওয়া সহজ হবে তবে খরচ বেশি হতে পারে।
    • বাজার গবেষণা করে দেখুন: সবার আগে টার্গেট মার্কেট ও ক্লায়েন্ট নির্ধারণ করুন।
    • পর্যাপ্ত অনুমোদন নিন: সব ধরনের সরকারি অনুমোদন ও লাইসেন্স নিশ্চিত করে কাজ শুরু করুন।

    এছাড়াও আপনারা যদি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজন মিলে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দিতে পারেন তাহলে কিন্তু খুবই ভালো হয় এবং কম খরচের মধ্যে আপনারা চাইলে ছোটখাটো একটা গার্মেন্টস দিয়ে প্রথম অবস্থায় শুরু করতে পারেন এক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা হলো এবং দিন দিন সেটা আরো বড় করতেও পারবেন।


    আরো পড়ুন: গার্মেন্টসে পদোন্নতির আবেদন করার নিয়ম 


    উপসংহার:

    গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কত টাকা লাগে সেটা মূলত নির্ভর করে আপনার গার্মেন্টসের আকার এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনার উপর। ছোট আকারে যদি আপনি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দিতে চান তাহলে ১ থেকে ৫ কোটি টাকা খরচ পড়বে। আর যদি এর থেকে বড় দিতে চান তাহলে ২০-৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত টাকা লাগতে পারে। 


    সঠিক পরিকল্পনা নিশ্চিত করুন এবং অর্থায়নের ব্যবস্থা করুন এবং বাজার বিশ্লেষণ করেই গার্মেন্টস এর ব্যবসা শুরু করতে পারেন। মূলত এত বড় প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার আগে অবশ্যই মার্কেট রিসার্চ এবং অন্যান্য বিষয়গুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Post a Comment (0)

    নবীনতর পূর্বতন