ঝিনাইদহে চাকরী মেলায় ১২ হাজার বেকার যুবকের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ
২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল ঝিনাইদহ শহর নতুন এক দিগন্তের সূচনা দেখলো। ঝিনাইদহ সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ আয়োজন করলো এক ব্যতিক্রমধর্মী “জব ফেয়ার”—যেখানে জেলার প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার বেকার যুবক চাকরির আশায় অংশগ্রহণ করে। এই মেলার মাধ্যমে একদিকে যেমন তরুণরা চাকরি পাওয়ার বাস্তব সুযোগ পেয়েছেন, অন্যদিকে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ জনবল খুঁজে পেয়েছে।
চাকরি মেলার আয়োজন ও উদ্বোধন
এই দিনব্যাপী চাকরি মেলার উদ্বোধন করেন ঝিনাইদহ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. আনিচুর রহমান মৃধা, প্রেসক্লাবের সভাপতি আসিফ কাজল, মডার্ণ ফার্মাসিউটিক্যালস’র প্রতিনিধি এবিএম জাহাঙ্গীর হোসেন, আইডিইবির সভাপতি ইয়াসিন আলী সহ আরও অনেকে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যক্ষ বলেন,
“আমরা চাই, শিক্ষিত বেকার তরুণরা এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলুক। এই মেলা সেই লক্ষ্য পূরণের একটি ধাপ।”
অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ
মেলায় ১১টি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়, যারা সরাসরি সিভি সংগ্রহ করে প্রার্থীদের স্ক্রিনিং করে। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
-
জোহান ড্রিম ভ্যালি
-
জোহান এগ্রা ফুড
-
সিও
-
সৃজনী ফাউন্ডেশন
-
ওয়ালটন
-
এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যালস
-
সার্ফ এগ্রো
-
ফ্রিডম অ্যাডভান্সমেন্ট
-
আয়ান এন্টারপ্রাইজ
-
ই-লার্নিং এন্ড আর্নিং
চাহিদাসম্পন্ন পদের তালিকা
এই চাকরি মেলায় মূলত কারিগরী ও আইটি খাতে দক্ষ প্রার্থীদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। নিচের পদের জন্য সিভি জমা নেওয়া হয়েছে:
-
মোবাইল সার্ভিসিং টেকনিশিয়ান
-
অটোমোবাইল ও ফার্ম মেশিনারী অপারেটর
-
কম্পিউটার অপারেটর
-
ইলেকট্রিশিয়ান
-
আইটি এক্সপার্ট
-
ওয়েব ডেভেলপার
এই পদের অধিকাংশই ঝিনাইদহের স্থানীয় টেকনিক্যাল কলেজ থেকে দক্ষতা অর্জন করা শিক্ষার্থীদের জন্য এক বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হয়েছে।
চাকরিপ্রার্থীদের অভিজ্ঞতা
সকালের পর থেকেই প্রার্থীদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠে মেলাপ্রাঙ্গণ। শুধুমাত্র শহরের প্রার্থীরা নয়, আশপাশের গ্রাম থেকেও অসংখ্য তরুণ চাকরির আশায় মেলায় অংশ নেন।
সাধুহাটী থেকে আসা অনার্স পড়ুয়া নাজমুস সাকিব বলেন,
“আমি তিনটি প্রতিষ্ঠানে সিভি জমা দিয়েছি। এখানে এসে আমি বুঝলাম, আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য এমন আয়োজন কতটা দরকার ছিল।”
অনেকেই বলেন, আগে কখনো এমন কাজের সুযোগ সরাসরি হাতে পাওয়া যায়নি।
ঝিনাইদহ টেকনিক্যাল কলেজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
অধ্যক্ষ ড. আনিচুর রহমান মৃধা জানান,
“আমাদের লক্ষ্য ঝিনাইদহ সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজকে জাতীয় পর্যায়ের একটি মডেল কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। ইতোমধ্যে আমাদের প্রায় ৩০০ জন বিদেশে কর্মরত এবং ৪০ জন সম্প্রতি চীনে স্কলারশিপে গেছেন।”
এছাড়াও পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত ওয়ার্কশপ এখনো সচল রয়েছে এবং সেখান থেকেই ছাত্ররা বাস্তব জ্ঞান অর্জন করছে।
কেন এই চাকরি মেলা ছিল গুরুত্বপূর্ণ?
এই চাকরি মেলাটি শুধু একটি দিনের আয়োজন ছিল না; এটি ছিল এক দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার বাস্তব রূপ। সরকারি ও বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সংকট যখন বেড়েই চলেছে, তখন এমন উদ্যোগ তরুণদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করে